রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দানশীলতা

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যেসব মানবীয় বিভিন্ন গুনাবলীতে অতুলনীয় ছিলেন, তার মধ্যে দানশীলতাও ছিল অন্যতম। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدَ النَّاسِ، وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ…..فَلَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَجْوَدُ بِالخَيْرِ مِنَ الرِّيحِ المُرْسَلَةِ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানব জাতির মধ্যে সর্বাধিক দানশীল ছিলেন। এবং তার এ দানশীলতা আরো বেশী বেড়ে যেত যখন রমজান মাসে হযরত জিব্রাইল (আ.) এর সাথে সাক্ষাৎ হত। তখন তার দানশীলতা প্রবাহিত মুক্ত বাতাসের চেয়েও বেড়ে যেত [বুখারী ৬]।
সুবহানাল্লাহ! কি পরিমাণ দানকারীকে মানব জাতির মধ্যে সর্বাধিক দানশীল বলা যায়, তার কোন সীমারেখা চিন্তা করে কল্পনা করাও অনেক মুশকিল। অথচ আমাদের প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনই দানশীল ছিলেন।
তার দানশীলতার পরিপূর্ণ বর্ণনাতো এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে সম্ভব নয়। তথাপি যেহেতু তিনি আমাদের আদর্শ। তাকে অনুস্মরণ করতে আমরা আদিষ্ট। তাই আমাদের হৃদয়কে দানের প্রতি উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে কিছু বর্ণনা উল্যেখ করার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আশা করি এসব বর্ণনা ও ঘটনাবলী আমাদের অন্তরে কিছুটা হলেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দানশীলতার রেখাপাত করবে এবং বেশী থেকে বেশী দানের প্রতি উদ্বোদ্ধ করবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দানশীলতার বর্ণনা দিতে গিয়ে হযরত জাবের (রা.) বলেন,
مَا سُئِلَ النبيُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلم عَن شَيءٍ قَطُ فَقَال: لا) ٢٩٨ (
অর্থাত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট কোন বস্তু চাওয়া হয়েছে আর তিনি ‘না’ বলেছেন, এমনটি কখনও হয়নি [আদাবুল মুফরাদ ২৯৮]।
কবি ফারাযদাক বলেন, مَا قَالَ لَا قَطُّ إِلَّا فِي تَشَهُّدِهِ لَوْلَا التَّشَهُّدُ كَانَتْ لَاؤُهُ نَعَمُ
কালেমায়ে শাহাদাত ছাড়া তিনি জিবনে কখনও ‘না’ শব্দ বলেননি। যদি কালেমায়ে শাহাদাত না থাকত, তাহলে তার ‘না’ হ্যা ই হত [মিরকাত ৪/১৩৭০]।
হযরত আনাস (রা.) বলেন,
مَا سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْإِسْلَامِ شَيْئًا إِلَّا أَعْطَاهُ، قَالَ: فَجَاءَهُ رَجُلٌ فَأَعْطَاهُ غَنَمًا بَيْنَ جَبَلَيْنِ، فَرَجَعَ إِلَى قَوْمِهِ، فَقَالَ: يَا قَوْمِ أَسْلِمُوا، فَإِنَّ مُحَمَّدًا يُعْطِي عَطَاءً لَا يَخْشَى الْفَاقَةَ (مسلم ২৩১২)
অর্থাত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট যখনই কেউ কিছু চেয়েছে, তিনি তাকে তা দান করেছেন। এমনকি এক ব্যক্তি তার নিকট এ পরিমাণ বকরী চাইল যাতে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী নিম্নভূমি পরিপূর্ণ হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সে পরিমাণ বকরীই দান করলেন। লোকটি নিজ সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে বলল, হে আমার কওমের লোকেরা, তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে নাও। কেননা মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতো অধিক পরিমাণ দান করেন যে, তিনি কোন দরিদ্রতার ভয় করেন না [মুসলিম ২৩১২]।
তার দানশীলতার কোন দৃষ্টান্ত এ পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবেনা। কারণ তিনি তো আপন ইচ্ছায় দারিদ্রতাকে বরণ করে নিয়েছিলেন। যত বেশী পরিমাণই সম্পত্তি তার হস্থগত হোক না কেন, তিনি তার পুরোটি দান করার মাধ্যমেই প্রশান্তি লাভ করতেন। নতুবা যদি তিনি তা জমিয়ে রাখতেন, তাহলে তার সম্পত্তি যে কি পরিমাণ হতো তা একমাত্র আল্লাহ পাকই ভাল জানেন।
কুরানের বিধান অনুযায়ী যুদ্ধবিজয়ের পর যেসব সম্পত্তি মুসলমানদের হস্তগত হয়, তার পুরোটির এক পঞ্চমাংশ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্যে নির্ধারিত। চিন্তা করুন, শুধুমাত্র এ সম্পদগুলিই যদি তিনি জমা করে রাখতেন, তাহলেই তো তিনি আরবের মধ্যে সবচেয়ে বড় ধনী হয়ে যেতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। বরং সবই বিলিয়ে দিয়েছেন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। মানবতার কল্যণে। এবং এটা তার একদম স্বভাবে পরিণত হয়ে গিয়েছিল যে তার নিকট কখনও কোন সম্পত্তি জমা থাকুক এটা তিনি মোটেও পছন্দ করতেন না। যতক্ষন না তিনি তা দান করে দিয়েছেন, ততক্ষন পর্যন্ত শান্তি পেতেন না।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বণিত,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْ كَانَ لِي مِثْلُ أُحُدٍ ذَهَبًا مَا يَسُرُّنِي أَنْ لاَ يَمُرَّ عَلَيَّ ثَلاَثٌ، وَعِنْدِي مِنْهُ شَيْءٌ إِلَّا شَيْءٌ أُرْصِدُهُ لِدَيْنٍ (بخاري ২৩৮৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমার নিকট যদি উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ থাকে। তাহলেও আমি পছন্দ করিনা যে তিন দিন অতিবাহিত হয়ে যাবে আর তার কোন অংশ বাকী থেকে যাবে। (অথাত তিন দিনের মধ্যেই সব বিলিয়ে দিব) তবে ঋন পরিশোধের উদ্দেশ্যে কিছু রাখলে রাখতে পারি [বুখারী ২৩৮৯]। আল্লাহু আকবার! যিনি মাত্র তিন দিনের মধ্যে উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ দান করে শেষ করে দেন, তার হৃদয় যে কত প্রসস্ত, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
হযরত উকবা (রা.) বলেন,
صَلَّيْتُ وَرَاءَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ العَصْرَ، فَسَلَّمَ، ثُمَّ قَامَ مُسْرِعًا، فَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ إِلَى بَعْضِ حُجَرِ نِسَائِهِ، فَفَزِعَ النَّاسُ مِنْ سُرْعَتِهِ، فَخَرَجَ عَلَيْهِمْ، فَرَأَى أَنَّهُمْ عَجِبُوا مِنْ سُرْعَتِهِ، فَقَالَ: ্রذَكَرْتُ شَيْئًا مِنْ تِبْرٍ عِنْدَنَا، فَكَرِهْتُ أَنْ يَحْبِسَنِي، فَأَمَرْتُ بِقِسْمَتِهِ )بخاري ৮৫১(
আমি মদিনায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পিছনে আসরের নামাজ আদায় করছিলাম। সালাম ফিরানোর পর দেখলাম তিনি দ্রুত দাড়িয়ে গেলেন এবং কাতার ভেদ করে যেন লোকদের গর্দানের উপর দিয়ে একজন স্ত্রীর ঘরের দিকে গেলেন। লোকেরা তার এমন তাড়াহুড়া দেখে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে গেল। অতঃপর তিনি ঘর থেকে বের হলেন এবং দেখলেন সাহাবাগন তার এ তাড়াহুড়া দেখে আশ্চর্যান্বিত। তাই তিনি (খুলাসা করে) বললেন, আমার নিকট একটি স্বর্ণের টুকরার কথা স্মরন হয়েছে। আমি পছন্দ করিনা যে (তা আমার নিকট থেকে যাক আর) আমি তার কথা ভুলে যাই। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা (গরীবদের মাঝে) বন্টন করার নির্দেশ প্রদান করলেন [বুখারী ৮৫১]। সুবহানাল্লাহ! কেমন ছিল তার স্বভাব! তা চিন্তা করতেই মাথা ঘুরে পৃথিবীর সম্পদশালীদের। আমাদের রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনই দানশীল ছিলেন।
মুসলিম শরীফের রেওয়ায়েতে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَنَمًا بَيْنَ جَبَلَيْنِ، فَأَعْطَاهُ إِيَّاهُ(٢٣١٢)
হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। এক ব্যক্তি এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এপরিমাণ বকরী চাইল যাতে দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী নিম্নভূমি পরিপূর্ণ হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে সে পরিমাণ বকরীই দান করলেন [মুসলিম ২৩১২]।
সুবহানাল্লাহ! দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থান পরিপূর্ণ হয়ে যাবে, এপরিমাণ বকরী হিসাব করলে কত শত হতে পারে চিন্তা করুন। এবার ভেবে দেখুন আমাদের কল্পনার কোন দানশীল ব্যক্তি কি একজন ভিক্ষুক কে এত পরিমাণ বকরী দান করতে পারবে? অথচ এটাই করে দেখিয়েছেন আমাদের রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
কোন কোন বর্ণনা এমন পাওয়া যায় যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দানের মনমানসিকতা এতই প্রবল ছিল যে, আপন প্রয়োজনের জিনিস পর্যন্তও কেউ চাইলে দিয়ে দিতেন। যেমন এক বর্ণনায় এসেছে, হযরত সাহল ইবনে সা’দ (রা.) বলেন,
جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبُرْدَةٍ، فَقَالَ سَهْلٌ لِلْقَوْمِ: أَتَدْرُونَ مَا البُرْدَةُ؟ فَقَالَ القَوْمُ: هِيَ الشَّمْلَةُ، فَقَالَ سَهْلٌ: هِيَ شَمْلَةٌ مَنْسُوجَةٌ فِيهَا حَاشِيَتُهَا، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَكْسُوكَ هَذِهِ، فَأَخَذَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحْتَاجًا إِلَيْهَا فَلَبِسَهَا، فَرَآهَا عَلَيْهِ رَجُلٌ مِنَ الصَّحَابَةِ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا أَحْسَنَ هَذِهِ، فَاكْسُنِيهَا، فَقَالَ: ্রنَعَمْগ্ধ فَلَمَّا قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَمَهُ أَصْحَابُهُ، قَالُوا: مَا أَحْسَنْتَ حِينَ رَأَيْتَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَهَا مُحْتَاجًا إِلَيْهَا، ثُمَّ سَأَلْتَهُ إِيَّاهَا، وَقَدْ عَرَفْتَ أَنَّهُ لاَ يُسْأَلُ شَيْئًا فَيَمْنَعَهُ، فَقَالَ: رَجَوْتُ بَرَكَتَهَا حِينَ لَبِسَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لَعَلِّي أُكَفَّنُ فِيهَا (بخاري ৬০৩৬)
একবার এক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট একটি ডোরাযুক্ত চাদর নিয়ে এসে বলল ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনাকে এ চাদরটি পরিধান করার জন্য হাদিয়্যাহ করতে চাই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর তখন প্রয়োজন ছিল, তাই তিনি তা গ্রহণ করলেন। এবং তা পরিধান করে বের হলেন। তখন একজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর গায়ে চাদরটি দেখে বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! কতইনা চমৎকার এ চাদরটি! আমাকে তা দান করে দিন। সাহাবি চাইতেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যা। (অতপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা উনাকে দিয়ে দিলেন)। পরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন উনাদের নিকট হতে ফিরলেন। তখন সাহাবায়ে কেরামগন ঐ সাহাবিকে ভর্ৎসনা করতে লাগলেন। তারা বললেন, তুমি তো ভাল কাজ করনি। যখন দেখলে যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর চাদরের প্রয়োজন থাকাবস্থায় তা গ্রহণ করেছেন। তার পরও তুমি তা চেয়ে নিলে? অথচ তুমি জান যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট কোন কিছু চাওয়া হলে তিনি না বলেন না। তখন ঐ সাহাবি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দেহের সাথে লাগার বরকতের আশায় তা চেয়ে নিয়েছি। আমি আশা করি এ চাদরটির মাধ্যমেই আমর কাফন দেয়া হবে [বুখারী ৬০৩৬]।
চিন্তা করুন, আপন প্রয়োজন থাকা সত্বেও চাওয়া মাত্রই তিনি দান করে দিলেন। এমন দানের দৃষ্টান্ত কি পুরো পৃথিবী মিলে দিতে পারবে?
শুধু তাই নয়। বরং তার স্বভাব হয়ে গিয়েছিল যে তিনি দানশীলতার মাধ্যমেই আত্নার প্রশান্তি খুঁজে পেতেন। একারণেই দেখা যায় তিনি থাকলেও দিতেন, না থাকলেও দিতেন। এটা অনেক আশ্চর্যজনক মনে হচ্ছে? মনে হচ্ছে এটা কিভাবে সম্ভব? হ্যা, এটা বাস্তবেই প্রকাশিত হয়েছে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর থেকে।
হযরত উমর (রা.) বলেন,
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَأَلَهُ فَقَالَ: ্রمَا عِنْدِي شَيْءٌ أُعْطِيكَ، وَلَكِنِ اسْتَقْرِضْ حَتَّى يَأْتِينَا شَيْءٌ فَنُعْطِيَكَগ্ধ فَقَالَ عُمَرُ: مَا كَلَّفَكَ اللَّهُ هَذَا، أَعْطَيْتَ مَا عِنْدَكَ، فَإِذَا لَمْ يَكُنْ عِنْدَكَ فَلَا تُكَلَّفْ. قَالَ: فَكَرِهَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَوْلَ عُمَرَ حَتَّى عُرِفَ فِي وَجْهِهِ فَقَالَ الرَّجُلُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي وَأُمِّي أَنْتَ، فَأَعْطِ وَلَا تَخْشَ مِنْ ذِي الْعَرْشِ إِقْلَالًا، قَالَ: فَتَبَسَّمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: ্রبِهَذَا أُمِرْتُ (مسند البزار ২৭৩)
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে কিছু চাইল। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমাকে দিতে পারব এমন কোন কিছুই তো আমার নিকট বর্তমানে নেই। তবে তুমি কারো কাছ থেকে ঋন নিয়ে নাও। আমার নিকট যখনই কোন কিছু আসবে, সাথে সাথে আমি তুমাকে দিয়ে দেব। হযরত উমর (রা.) বলেন, আল্লাহ তো আপনাকে এভাবে দানের মুকাল্লাফ বানাননি। যা আপনার নিকট ছিল তা দান করে দিয়েছেন। এখন যেহেতু আপনার নিকট কিছু নেই, তখন তো আপনার উপর আর দানের দায়িত্বও নেই। হযরত উমর (রা.) এর কথাটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এতই অপছন্দ হল যে অসন্তুষ্টির নিদর্শন তার চেহারা মুবারকে সুস্পষ্ট ভেসে উঠল। তখন লোকটি বলল ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমর পিতা মাতা আপনার উপর কোরবান হোক। আপনি দান করতে থাকুন। আরশের অধিপতি আল্লাহ তা’আলা থেকে দারিদ্রতার ভয় করবেন না। একথা শুনার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনন্দিত হলেন এবং মুচকি হাসি তার চেহারা মুবারক থেকে ফুটে উঠল। তিনি বললেন আমি এ ব্যাপারেই আদিষ্ট হয়েছি [মুসনাদে বাযযার ২৭৩]।
পরিশেষে বলতে চাই আমরাও মাঝে মধ্যে কিছু দান সদকা করে থাকি। আর আমরা এতেই আত্নতৃপ্তিতে ভোগি যে আমি একজন দানশীল। না আমাদের আত্নতৃপ্তিতে ভোগার কোন প্রয়োজন নেই। বরং আমাদের উচিৎ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দানশীলতার দিকে তাকানো। তখন নিজের দানকে আর অনেক কিছু মনে হবেনা।
দ্বিতীয়ত যার যতটুকু সামর্থ্য রয়েছে ততটুকুর মধ্যে থেকেই দানশীলতাকে নিজেদের স্বভাবে পরিণত করতে চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সর্বক্ষেত্রেই পূর্ণঙ্গরূপে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অনুস্মরণ করার তাওফীক দান করুন, আমিন।

লেখক
মুহাম্মদ সায়েম কাসিমি
উস্তায, জামেয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া শামীমাবাদ, সিলেট
১৭ অক্টোবর ২০২০ ইংরেজী