আজ সরকার ঘোষিত মাদরাসা প্রতিরোধ দিবস। এ দিন স্মরণে আনে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়—জুলাই বিপ্লব।
বিগত বছরগুলোতে দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে যখন জনগণের ক্ষোভ ফুঁসে উঠছিল, তখন সাধারণ জনগণ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কওমি মাদরাসার ছাত্ররাও এগিয়ে এসেছিল ঈমানি দৃঢ়তা ও আত্মত্যাগের অনন্য নজির স্থাপন করে।
গতবছরের জুলাই-আগস্ট জুড়ে যখন চারপাশে আতঙ্ক, বিভ্রান্তি ও অস্থিরতা; তখন মাদরাসা ছাত্ররা রাস্তায় দাঁড়িয়েছিল সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে—নিঃস্বার্থহীনভাবে।
বিশেষভাবে স্মরণীয়, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘটিত প্রতিরোধ—যা আন্দোলনের গতিপথ পাল্টে দেয়। সেদিন হাজারো মাদরাসা ছাত্র শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যে সাহস দেখিয়েছিল, তা সারাদেশে সৃষ্টি করেছিল এক নতুন প্রেরণা। প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছিল দূর-দূরান্তে, ঘুম ভাঙিয়েছিল হাজারো বিপ্লবী প্রাণের।
২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে আলেম-উলামাদের ওপর পরিচালিত নৃশংস গণহত্যা, ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে শহীদ হওয়া প্রায় ৩০ জন আলেম-উলামা এবং সর্বশেষ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শতাধিক কওমি ছাত্র ও আলেমের শাহাদাতবরণ—এসব মিলিয়ে মাদরাসা ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত এক ইতিহাস আজও অনুচ্চারিত। এ আত্মত্যাগ কোনো রাজনৈতিক পরিসরের নয়। এটি আদর্শ, ঈমান ও ইনসাফের পক্ষে দাঁড়ানোর শুদ্ধতম দৃষ্টান্ত।
পরিতাপের বিষয়, একটি চক্র এই ইতিহাস আড়াল করতে চায়। কওমি অঙ্গনের এ মহান আত্মত্যাগকে ইতিহাস থেকে মুছে দেওয়ার অপচেষ্টা চালায় নীরবে। কিন্তু অতীত বলে—ইতিহাসকে কখনো মুছে ফেলা যায় না। শহীদদের রক্ত অম্লান, তাদের আত্মত্যাগ জাতির অন্তরে গাঁথা।
এই দিনে আমরা সকল মাদরাসা, আলেম ও শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানাই, এ ইতিহাস ধারণ করুন, শহীদদের স্মরণ করুন, আত্মত্যাগের সেই চেতনায় নতুন পথ নির্মাণ করুন।
পাশাপাশি একথাও বলতে চাই— অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমানে সেবা ও মানবাধিকার রক্ষার নামে বাংলাদেশে ‘জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন’ খোলার যে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে— আমরা এর নিন্দা জানাই। অনতিবিলম্বে এই সমঝোতা চুক্তি বাতিল করতে হবে। নতুবা যুগে যুগে যেমন আলেম-উলামারা প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছিলো, এর বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে রাস্তায় নামতে বাধ্য হবে।
Leave A Comment